সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হেলমেট না পরলে স্টার্ট হবে না মোটরসাইকেল

হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালানোর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। জরিমানা ও মামলার ভয় দেখিয়েও প্রশাসন সফল হচ্ছে না এ ব্যাপারে। তাই হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করা যায় কিনা এমন চিন্তা থেকেই নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার নাম স্মার্ট বাইক সিস্টেম। এই প্রযুক্তিতে হেলমেট ব্যবহার না করলে মোটরসাইকেল স্টার্টই হবে না। এমনকি নেশাগ্রস্ত থাকালেও মোটরসাইকেল স্টার্ট হবে না।

এমন ব্যতিক্রমী উদ্ধাবনী আবিষ্কার করেছেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মতিউর রহমান রিয়াত। রিয়াত ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র। বাড়ি দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইল গ্রামে। বাবা ছাতইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ঝর্ণা বেগম গৃহিণী। দু’ভাইয়ের মধ্যে রিয়াত বড়। ছোট ভাই ৯ম শ্রেণির ছাত্র।

রিয়াত ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেন দেশ ও জাতির জন্য কিছু করার। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি চালিয়ে যান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা। ইতোমধ্যে ৬টি প্রজেক্টের সফল উদ্ভাবনীর জন্য জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হবার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে উইন্ড পাওয়ার মিলের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান অধিকার করেন তিনি। এবার তার আবিস্কার ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’।

এই সিস্টেমে চালক হেলমেট না পরে কোনোভাবেই মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে পারবে না। এমনকি কোনো আরোহী যদি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটরসাইকেল চালাতে চায় তাহলে হেলমেটের সামনে একটি বায়ু সেন্সর বা ঘ্রাণ সংবেদনশীল সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে অ্যালকোহলের ঘ্রাণ পেলেই মোটরসাইকেলটি স্টার্ট নেবে না। প্রথম অবস্থায় স্টার্ট নিলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া সাময়িকভাবে মোটরসাইকেল চুরি হওয়া থেকেও রক্ষা করা যাবে।

এ প্রযুক্তিতে মোটরসাইকেলের নির্দিষ্ট স্থানে একটি ডিভাইস বসানো থাকে। যা ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হেলমেটে বসানো অপর ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করা থাকে। চালক ওই নির্দিষ্ট হেলমেট মাথায় না পরলে আরোহী তার বাইকটি চালু করতে পারবে না। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকৃত কেউ যদি হেলমেট ছাড়া বাইক স্টার্ট করতে চায় তাহলে বাইক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার বলা হবে ‘বাইকটি সক্রিয় করতে অনুগ্রহ করে হেলমেট ব্যবহার করুন’। একই সঙ্গে ডিসপ্লেতেও লেখা উঠবে ‘হেলমেট ব্যবহার আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।’

বাইকের ডিভাইসটি বাইক থেকে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করবে। হেলমেটের উপরে থাকা সোলার কোষ থেকে হেলমেটের ডিভাইসটি বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া পেনসিল ব্যাটারি ব্যবহার করেও হেলমেটের ডিভাইসটি সচল রাখা যায়। এই সিস্টেম তৈরি করতে রিয়াতের খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। আর পুরো সিস্টেমটি তৈরিতে সময় লেগেছে ৫ মাস। এ সিস্টেমের উন্নয়নের জন্য এর সঙ্গে আরও একটি সেন্সর ডিভাইস যুক্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে রিয়াতের।

কয়েকদিন যাবৎ একটি মোটরসাইকেলে পরীক্ষামূলক ভাবে চালিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা পাননি জানিয়ে রিয়াত বলেন, এতে ক্ষতিকর কোনো কিছু নেই যা মানুষের শরিরের জন্য ক্ষতি বয়ে আনে।

কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ ড. মো. নুরে আলম জানান, জেলা পর্যায়ে ‘স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৭’ অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। সেখানে ১০টি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে রিয়াতের উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার সবখানেই ছড়িয়ে পড়েছে। রিয়াতের এই উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি মানুষকে তার সচেতন হবার পাশাপাশি দুর্ঘটনাও কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখাবে বলে তিনি জানান।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: সাড়ে ৬ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধূরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে র্দীঘদিন ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সংস্কার না হওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ছাত্রাবাস সংস্কার করে তা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর দ্বন্দ্ব এখ...

ডিপ্লোমা কি অনার্স এর সমমান?

না ডিপ্লোমা অনার্সের সমমান নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কোনটা কি দেখতে নিচের ছবিটা দেখুন

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেতে চান ?

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে একটি । এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) ফ্যাকাল্টি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) এর ফ্যাকাল্টি এর ডিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এর পরপরই । কেননা এই দুইটি ফ্যাকাল্টি বিশেষত CSE ফ্যাকাল্টি এর দায়িত্বে রয়েছেন আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ আর আমাদের শ্রদ্ধাভাজন " ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার" । এই কথা শুনে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট কিংবা ডুয়েটিয়ান রা যত চিল্লাচিল্লি করুক না কেন শেষ পর্যন্ত যখন জব মার্কেট কে এনালাইসিস করবে সকলে এবং সেই সাথে যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ দের পরামর্শ নিবেন তখনই বুঝতে পারবেন কথাটি কতটুকু সত্য । যাই হউক এবার আসি মুল বক্তব্য এ । একথা সত্য যে যে ডুয়েট এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাতিরখে কেউ কখনও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির আশা কোনভাবেই করতে পারে না ।