সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: সাড়ে ৬ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি


২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধূরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে র্দীঘদিন ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সংস্কার না হওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ছাত্রাবাস সংস্কার করে তা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ।














অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর দ্বন্দ্ব এখনও বিদ্যামান। ছাত্রলীগ চাইছে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া হোক। তবে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের আশঙ্কায় ছাত্রমৈত্রী ছাত্রাবাস খোলার বিপক্ষে রয়েছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর এ দ্বন্দ্বের কারণে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাস খোলার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য দুইটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রদের জন্য দুই তলা শহীদ মোনায়েম ও শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রঃ) ছাত্রাবাসে প্রায় ২১০জন শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে। অপর ছাত্রীদের একটি তিনতলা আক্তারুন্নেসা ছাত্রাবাসে ৮৮জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

সরেজমিনে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের শহীদ মোনায়েম ও শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রঃ) এবং আক্তারুন্নেসা ছাত্রাবাসের ভবন জরার্জীণ হয়ে আছে। ভবনগুলোর সামনে রাস্তায় আগাছা জন্মেছে। শহীদ মোনায়েম ও শাহ নেয়ামতুল্লাহ (রঃ) ছাত্রাবাসে সংঘর্ষের চিহ্ন এখনও রয়েছে, ছাত্রাবাস দুইটির অধিকাংশ কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙা। ছেলেদের দুটি ছাত্রাবাসের ভবনের গায়েও লতাপাতা ও আগাছা জন্মেছে।

তিনটি ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তা আগাছায় মিলে গেছে। কোনটি ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তা তা বোঝার উপায় নেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ছাত্রাবাসাগুলো বন্ধের পর থেকেই অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে। এখন সেগুলো একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবনগুলোর আশপাশে মানুষজনের আনাগোনা নেই। একপ্রকার সুনসান নীরবতা। তবে সেই নির্জন জায়গার দুই থেকে তিনজনের শিক্ষার্থীদের দুইটি গ্রুপকে বসে গাঁজা খেতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রাবাসগুলো পড়ে থাকায় ওই এলাকায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা নেই। ফলে কিছু বখাটে ছেলেরা ওই নির্জন এলাকায় আড্ডা দেয়। ওই এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা গেলে অনেক সময় ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রাবাসগুলো বন্ধের পর পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় তা খুলে দেওয়া হয়নি। এভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ছাত্রাবাসগুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবে গত বছর শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ছাত্রাবাসাগুলো খুলে দিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির প্রধান ছিলেন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বর্তমান উপাধ্যক্ষ আলী আকবর খান।

জানতে চাইলে আলী আকবর খান জানান, ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালে তাঁকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার কমিটি ইনস্টিটিউটের তৎকালীন অধ্যক্ষকে কমিটির প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে ছাত্রাবাসাগুলো সংস্কার করে খুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এরপর ছাত্রাবাসগুলো খোলার বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মালেক আহমেদ রুবেল, মনিরসহ আরো কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এই প্রতিষ্ঠানে অনেক গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করে। আর এখানে যারা পড়োশোনা করে তাদের অন্তত ৯৯ ভাগই নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থী। কিন্তু হোস্টেল বন্ধ থাকায় তারা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। আবার বাইরে মেসে ভাড়া বেশি হওয়ায় সেখানে থেকে পড়াশোনা করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

জানতে চাইলে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রিগেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এখন বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা চলছে, সেজন্য জোরালো দাবি জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর   পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্যেই ছাত্রাবাসগুলো খুলে দিতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি হৃদয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আব্দুর রেজ্জাক জানান, তিনি গত ১ আগস্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি যোগদানের পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অপর আরেকটি পক্ষ (ছাত্রমৈত্রীর নেতাকর্মীরা) এসে আবার ছাত্রাবাসগুলো খুলে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আব্দুর রেজ্জাক বলেন সিল্কসিটি নিউজকে, ‘ছাত্রাবাসাগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন সংস্কার ছাড়া সেগুলো খুলে দিয়ে কোনো লাভ নেই। ছাত্রাবাসগুলো সংস্কারের জন্য সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে ১২ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের প্রকৌশলীরা ছাত্রাবাসগুলো পরিদর্শন করেছেন। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পেলে ছাত্রাবাসগুলো সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় তৎকালীন ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রমৈত্রীর সহসভাপতি ও কম্পিউটার বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানি গুরুতর আহত হয়ে ওইদিন বিকেল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ আরো ১২জন আহত হন। এই ঘটনায় ইনস্টিটিউটের তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি নিজামউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ সাতজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ডিপ্লোমা কি অনার্স এর সমমান?

না ডিপ্লোমা অনার্সের সমমান নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কোনটা কি দেখতে নিচের ছবিটা দেখুন

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেতে চান ?

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে একটি । এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) ফ্যাকাল্টি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) এর ফ্যাকাল্টি এর ডিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এর পরপরই । কেননা এই দুইটি ফ্যাকাল্টি বিশেষত CSE ফ্যাকাল্টি এর দায়িত্বে রয়েছেন আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ আর আমাদের শ্রদ্ধাভাজন " ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার" । এই কথা শুনে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট কিংবা ডুয়েটিয়ান রা যত চিল্লাচিল্লি করুক না কেন শেষ পর্যন্ত যখন জব মার্কেট কে এনালাইসিস করবে সকলে এবং সেই সাথে যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ দের পরামর্শ নিবেন তখনই বুঝতে পারবেন কথাটি কতটুকু সত্য । যাই হউক এবার আসি মুল বক্তব্য এ । একথা সত্য যে যে ডুয়েট এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাতিরখে কেউ কখনও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির আশা কোনভাবেই করতে পারে না ।