সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কুষ্টিয়া সরকারী পলিটেকনিকের কতিপয় শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতায় অসহায় কারিগরি শিক্ষার্থীরা


কুষ্টিয়া সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের কতিপয় শিক্ষকের অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার আর সেচ্ছাচারিতায় অসহায় হয়ে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, তাত্বিক পরীক্ষায় পাশ করলেও ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করানোসহ নানা রকম নির্যাতন করছে কতিপয় শিক্ষক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব শিক্ষকদের মূল হোতা কুষ্টিয়া সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিভিল বিভাগের প্রধান শহরের বেসরকারী পলিটেকনিক কুষ্টিয়া ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজী (কিয়েট) এর মালিক আব্দুল মান্নান। কুষ্টিয়া বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের লিখিত  অভিযোগ থেকে জানা যায় তাদের শিক্ষার্থীরা তাত্বিক পরীক্ষায় পাশ করলেও কুষ্টিয়া পলিটেকনিকে ব্যবহারিক পরিক্ষা দিতে এসে মান্নান স্যারের রোষানলে পড়ে কোমলমতি  শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন বিপন্ন হচ্ছে। তাত্বিকসহ সকল পরীক্ষায় পাশ করলেও মান্নান স্যারের চাহিদা মত উৎকোচ না দেওয়ায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় তাদের ফেল করিয়ে দেওয়া হয়।

প্রভাবশালী এই শিক্ষক আব্দুল মান্নানের বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা যায় তিনি নিজে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিভিল বিভাগের প্রধান হলেও সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ মালিকানায় পরিবারের সদস্যদের নামে ২০১৩ সালে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের পাশেই কালিশংকরপুর জামতলা মোড়ে নিজ বাড়ি ও কাটাইখানা মোড়ে  কুষ্টিয়া ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজী (কিয়েট) নামে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।

অন্য বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে শিক্ষার্থীদের ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে কিয়েটে ভর্তি হতে বাধ্য করে।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায় কিয়েট চালায় আব্দুল মান্নানসহ সরকারী পলিটেকনিকের কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক।

কুষ্টিয়ার কয়েকটি বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের পরিচালকরা জানান বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র থাকলেও আব্দুল মান্নান গং প্রভাব খাটিয়ে কুষ্টিয়া অঞ্চলে কোন বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ব্যবহারিক পরীক্ষা কেন্দ্র হতে দেয় না। ২০১৩ সালে কিয়েট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আব্দুল মান্নান বিভিন্ন ইন্সটিটিউটের সিভিল বিভাগের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া শহরের কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ইন্সটিটিউটের সিভিল বিভাগের প্রধান ইসতিয়াক আহমেদ এর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৪ সনের (অনুষ্ঠিত ডিসেম্বর, ১৪- ফেরুয়ারী, ১৫) বোর্ড সমাপনী ব্যবহারিক পরীক্ষায় ৪র্থ পর্বের জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (৬৪৪১), হাইড্রোলিক্স (৬৪৪৫) এবং ৬ষ্ঠ পর্বের এ্যাডভান্সড সার্ভেয়িং (৬৪৬৪), ডিজাইন অব স্ট্রাকচার (৬৪৬৩) এবং কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট (৬৪৬৫) বিষয় গুলোর অভ্যমত্মরীন পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহন শেষে পরীক্ষার্থীদের নম্বরপত্রে পেন্সিলের মাধ্যমে নম্বর লিপিবদ্ধ করে আমার স্বাক্ষর গ্রহন করা হয় এবং আমাকে জানানো হয় উক্ত নম্বরপত্র কম্পিউটার কম্পোজ করে পূণরায় আমার স্বাক্ষর গ্রহন করে আমাকে কপি প্রদান করা হবে। কম্পোজ করার পর আমার স্বাক্ষর গ্রহন করা হয় এবং অত্র প্রতিষ্ঠানের সিভিল বিভাগের প্রধান আব্দুল মান্নান স্যার আমাকে জানান, ’’ এখন ফটোকপি করতে সমস্যা থাকায় নম্বরপত্রের কপি আপনাকে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না , ১ ঘন্টা পরে নম্বরপত্রের ফটোকপি আপনাকে দেয়া হবে’’। কিন্তু মান্নান স্যারের চাহিদা মত টাকা না দেওয়ায় বারংবার অনুরোধ করার পরও আজ অবধি নম্বরপত্রের কোন কপি আমাকে দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া অঞ্চলের অন্যতম শিক্ষা গ্রুপ সাউথ এশিয়ান স্পেশালাউজড এডুকেশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সূফি ফারুক ইবনে আবু বকর জানান, আব্দুল মান্নান সরকারী প্রভাব খাটিয়ে অনিয়ম দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারি আচরন করছেন। তাত্বিক পরীক্ষার পাশ করলেও তিনি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিচ্ছেন। এটা তিনি সঠিক আচরন করছেন না।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকটি বেসরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ব্যবহারিক পরীক্ষায় ফেল করার বিষয়ে জানতে চেয়ে সরকারী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করলেও তারা কোন প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এ বিষয়ে জানাবেন আমার অধ্যক্ষ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: সাড়ে ৬ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধূরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে র্দীঘদিন ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সংস্কার না হওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ছাত্রাবাস সংস্কার করে তা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর দ্বন্দ্ব এখ...

ডিপ্লোমা কি অনার্স এর সমমান?

না ডিপ্লোমা অনার্সের সমমান নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কোনটা কি দেখতে নিচের ছবিটা দেখুন

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেতে চান ?

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে একটি । এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) ফ্যাকাল্টি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) এর ফ্যাকাল্টি এর ডিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এর পরপরই । কেননা এই দুইটি ফ্যাকাল্টি বিশেষত CSE ফ্যাকাল্টি এর দায়িত্বে রয়েছেন আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ আর আমাদের শ্রদ্ধাভাজন " ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার" । এই কথা শুনে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট কিংবা ডুয়েটিয়ান রা যত চিল্লাচিল্লি করুক না কেন শেষ পর্যন্ত যখন জব মার্কেট কে এনালাইসিস করবে সকলে এবং সেই সাথে যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ দের পরামর্শ নিবেন তখনই বুঝতে পারবেন কথাটি কতটুকু সত্য । যাই হউক এবার আসি মুল বক্তব্য এ । একথা সত্য যে যে ডুয়েট এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাতিরখে কেউ কখনও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির আশা কোনভাবেই করতে পারে না ।