সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাবধান, ডিপ্লোমা সমাপণী পরিক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে কঠোর আইন

দেশের আলোচিত ইস্যুগুলোর মধ্যে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি অন্যতম। পরীক্ষা মেধা যাচাইয়ের একটি অংশ হলেও দুঃখজনক বাস্তবতা যে, আমাদের দেশে হামেশা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। শুধু পাবলিক পরীক্ষা নয়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় নিয়োগ পরীক্ষারও। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে তুলকালামও ঘটেছিল কয়েক বছর আগে। তখন বিজি প্রেসের কর্মচারীসহ বেশ কয়েকজনকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অথচ প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে এত দিন। তবে সম্প্রতি তারা স্বীকার করেছেন, চলতি বছর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি প্রথম পত্র, পদার্থ বিজ্ঞান, গণিত ও রসায়ন বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ছিল; যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় ৩২ সেট প্রশ্ন তৈরি করাসহ প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের শাস্তির পাশাপাশি 'বিভ্রান্তি সৃষ্টি' ও 'মিথ্যা রটনা'র দায়ে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। আমরা সরকারের এ উদ্যোগকে ইতিবাচক অর্থেই দেখতে চাই। 



কয়েক বছর ধরে এমনটি দেখা যাচ্ছে যে, পরীক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র। সংবাদপত্রে ছাপা ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পরীক্ষা নেয়া প্রশ্ন হুবহু মিলেও যাচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কৃতিত্ব দেখাচ্ছে যারা, তাদের পকেটে জমা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অন্যদিকে সত্যিকারের মেধাবীদের জন্য সর্বনাশ হয়ে দেখা দিয়েছে এ প্রবণতা। আমরা লক্ষ্য করেছি, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উত্থাপিত হলে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নাকচ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এ ঘটনা কিছু সুবিধাভোগীর গুজব। সংশ্লিষ্টদের এমন মন্তব্যের কারণেই যে জড়িতরা আরো উৎসাহী হয় তা বলাই বাহুল্য। লক্ষণীয় যে, বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা এখন প্রায় প্রহসনে পরিণত হয়েছে। অথচ এ ধরনের প্রবণতা শুধু চরম নৈরাজ্যকরই নয়, এটি জাতিবিনাশী কর্মকা- বললেও অত্যুক্তি হয় না।


একটি দেশে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্নপত্রের ওপর ভরসা করে কেউ কেউ সহজেই বৈতরণী পার হবে। মেধাবী না হয়েও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ভর্তি হবে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দুর্নীতির সুবাদে চাকরির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। আর সত্যিকারের মেধাবীরা বঞ্চিত হবে প্রাপ্য সুযোগ থেকে। এমন অসম প্রতিযোগিতা কোনো দেশে কাঙ্ক্ষিত এবং সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এটি চরম অবক্ষয়েরই সাক্ষ্য বহন করে। পাশাপাশি এ ঘটনা লজ্জার এবং গ্লানিরও। তবে সম্প্রতি সরকার এ-সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং শাস্তির আওতা বৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে তা কার্যকর করা গেলে তা প্রশ্ন ফাঁস রোধে ইতিবাচক হবে বলেই আমরা আশা করি।

বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সহজেই প্রতীয়মান হয় অবক্ষয়কারীদের শিকড়বাকড় কতটা বিস্তৃত ও সামগ্রিকভাবে সমাজচিত্র কতটা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরাও সরকারকে বিভিন্ন সময় বলে এসেছি, প্রশ্ন ফাঁস ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হিসেবেই চিহ্নিত করা দরকার। আর সমাজের এ ব্যাধি সারাতে টোটকা দাওয়াই কোনো কাজে আসবে না। সমাজ-রাষ্ট্র থেকে এদের নির্মূলে কঠোর আইনের যেমন দরকার রয়েছে, তেমনি সফলতা পেতে সে আইন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বও দিতে হবে।
অতীতে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটিত হয়েছে বটে, কিন্তু এর পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা যায়নি। কেন যায়নি, তার সদুত্তর মেলা দুরূহ কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমরা মনে করি, যে দুষ্টচক্র শিক্ষা, পরীক্ষা কিংবা কর্মসংস্থানব্যবস্থা_ প্রায় সবকিছুতেই ছোবল মারছে, তারা দেশ-জাতির শত্রু। এদের রাহুগ্রাস থেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার তথা প্রশাসনের কঠোর হওয়া আবশ্যক। ১৯৮০ সালের আইনে প্রশ্ন ফাঁসে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণে ১০ বছর শাস্তির বিধান থাকলেও তা সংশোধন করে ১৯৯২ সালের 'দ্য পাবলিক একজামিনেশনস (অফেন্স) অ্যাক্ট'-এ চার বছর করা হয়েছিল। সাজা কমানোর বিষয়টি সন্দেহজনক কি না তা আইন সংশোধনের আগেই গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া সঙ্গত। আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সমাজসচেতনতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দেয়া কর্তব্য। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা সংঘবদ্ধ অপরাধ, সুতরাং এ চক্রকে দমনে কঠোর আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ বাস্তবায়নই প্রত্যাশিত ।


সূত্রঃ যায়যায় দিন

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: সাড়ে ৬ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধূরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে র্দীঘদিন ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সংস্কার না হওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ছাত্রাবাস সংস্কার করে তা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর দ্বন্দ্ব এখ...

ডিপ্লোমা কি অনার্স এর সমমান?

না ডিপ্লোমা অনার্সের সমমান নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কোনটা কি দেখতে নিচের ছবিটা দেখুন

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেতে চান ?

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে একটি । এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) ফ্যাকাল্টি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) এর ফ্যাকাল্টি এর ডিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এর পরপরই । কেননা এই দুইটি ফ্যাকাল্টি বিশেষত CSE ফ্যাকাল্টি এর দায়িত্বে রয়েছেন আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ আর আমাদের শ্রদ্ধাভাজন " ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার" । এই কথা শুনে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট কিংবা ডুয়েটিয়ান রা যত চিল্লাচিল্লি করুক না কেন শেষ পর্যন্ত যখন জব মার্কেট কে এনালাইসিস করবে সকলে এবং সেই সাথে যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ দের পরামর্শ নিবেন তখনই বুঝতে পারবেন কথাটি কতটুকু সত্য । যাই হউক এবার আসি মুল বক্তব্য এ । একথা সত্য যে যে ডুয়েট এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাতিরখে কেউ কখনও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির আশা কোনভাবেই করতে পারে না ।