সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ


উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ   গত দুই দশকে বেড়েছে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ও পাসের হার। বেড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও। তার পরও উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলো, এমনকি নেপালের চেয়েও পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সীদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যদিও নেপালে এ হার ১৫, শ্রীলংকায় ১৭ ও ভারতে ২৫  শতাংশ। ২০১২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে হিসাবটি করা হয়েছে এবং এটিই সর্বশেষ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, মনোযোগের অভাব ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্বাভাবিক ব্যয়ের কারণে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার বিষয়টিও বড় কারণ বলে মনে করছেন তারা।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে মোট ১২৮টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭ ও বেসরকারি ৯১। তার পরও ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা না নিয়েই শিক্ষাজীবনের ইতি টানছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, স্বাধীনতার পর তিন দশকের বেশি সময় উচ্চশিক্ষা তেমন গুরুত্ব পায়নি। এ কারণে একটা বড় সময় ধরে অবহেলিত ছিল উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। গত দুই দশকে এ খাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো দেশের নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না হলে পড়ালেখা শেষ করতে হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় এত বেশি যে, অনেকেই তা নির্বাহ করতে পারেন না। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় অনুযায়ী মান না থাকায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহও কম।
তথ্যমতে, দেশের ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ঝরে পড়ছে। মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ৫০ শতাংশ শিক্ষা শেষ না করে স্কুল থেকে বিদায় নিচ্ছে। আর কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর ২০ শতাংশ শিক্ষা শেষের আগেই ঝরে পড়ছে। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না বড় একটা অংশ।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সামর্থ্য নেই। এ কারণে এ হার কম। তবে গত পাঁচ বছরে এক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সূত্র জানায়, ২০০০ সালে কলেজশিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার ছিল ৪১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা নেমে আসে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশে। এছাড়া ২০১০ সালে কলেজশিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১১ সালে তা আরো কমে হয় ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
এদিকে উচ্চশিক্ষায় জনশক্তির সীমিত অংশগ্রহণ নিয়ে চিন্তিত সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, আগামী এক দশকে ছয়টি খাতে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এজন্য ব্যবস্থাপক, নির্বাহী ও টেকনিক্যাল অনেক পদে উচ্চশিক্ষিত লোকের প্রয়োজন পড়বে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দক্ষ ও যোগ্য লোকের সংকট সৃষ্টি হবে। বর্তমানে বস্ত্র, ইস্পাত, ওষুধ ও হসপিটালিটি খাতে দক্ষ লোকের মারাত্মক সংকট রয়েছে। আগামীতে তা আরো প্রকট হবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েস বলেন, আমাদের দেশের জনসংখ্যার তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা একেবারেই কম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও তা ব্যয়বহুল ও গুণগত মান উন্নত না হওয়ায় দেশের মানুষের বিরাট অংশ উচ্চশিক্ষা নিতে পারে না। তাছাড়া জনসংখ্যার বড় অংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর শেষ করেই কর্মজীবনে প্রবেশ এবং দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার কম।
ইউজিসি ও ব্যানবেইস প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আসন সংখ্যা ৬ লাখ ৫১ হাজার ১৭৮। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আসন রয়েছে ৫২ হাজার ৮০ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ লাখ ২৩ হাজার। এর বাইরেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশকিছু আসন রয়েছে।
সূত্রঃ বণিক বার্তা

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: সাড়ে ৬ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধূরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে র্দীঘদিন ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সংস্কার না হওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ছাত্রাবাস সংস্কার করে তা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর দ্বন্দ্ব এখ...

ডিপ্লোমা কি অনার্স এর সমমান?

না ডিপ্লোমা অনার্সের সমমান নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কোনটা কি দেখতে নিচের ছবিটা দেখুন

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেতে চান ?

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে একটি । এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) ফ্যাকাল্টি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) এর ফ্যাকাল্টি এর ডিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এর পরপরই । কেননা এই দুইটি ফ্যাকাল্টি বিশেষত CSE ফ্যাকাল্টি এর দায়িত্বে রয়েছেন আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ আর আমাদের শ্রদ্ধাভাজন " ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার" । এই কথা শুনে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট কিংবা ডুয়েটিয়ান রা যত চিল্লাচিল্লি করুক না কেন শেষ পর্যন্ত যখন জব মার্কেট কে এনালাইসিস করবে সকলে এবং সেই সাথে যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ দের পরামর্শ নিবেন তখনই বুঝতে পারবেন কথাটি কতটুকু সত্য । যাই হউক এবার আসি মুল বক্তব্য এ । একথা সত্য যে যে ডুয়েট এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাতিরখে কেউ কখনও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির আশা কোনভাবেই করতে পারে না ।