সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সুলভ করা হোক


পলিটেকনিক শিক্ষাব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, আজ থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে বাংলাদেশে সরকারী পলিটেকনিক ছিল হাতেগুনা ১০ থেকে ১৫ টি । সে সব প্রতিষ্টানে শিক্ষার্থী ছিল একেবারে নগন্য। সেই অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য তত্কালীন পলিটেকনিক ছাত্রশিক্ষকরা আন্দোলন করে আশির দশকে প্রতিষ্ঠা করেছিল ‘ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ (DUET)।

বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৪৯+টি সরকারি পলিটেকনিক এবং ৪৫০+টি বেসরকারি পলিটেকনিক রয়েছে। যেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় হাজার হাজার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বের হয় কিন্তু এর বেশীর ভাগেরই পড়ালেখার যাত্রা এতটুকুতে থেমে যায়, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ আর তাদের হয় না।

সেই তত্কালীন অল্পসংখ্যক হাতেগুনা কয়েকটি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ছিল একটিমাত্র প্রতিষ্টান ডুয়েট। বর্তমানে ৫০০+ পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য সেই একই প্রতিষ্ঠান ডুয়েট। ডুয়েটের মত এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় আর কোন প্রতিষ্টান গড়ে তুলেনি সরকার। শিক্ষা ব্যবস্থায় কেন এমন বৈষম্য আমাদের প্রতি?

বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় ডিপ্লোমা লাইনে যে হারে শিক্ষার্থী বাড়তেছে সে হারে তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কি? অবশ্যই না! তাহলে বর্তমানে এই অধিকসংখ্যক ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা তাদের ডিপ্লোমা কার্যক্রম শেষে পরবর্তীতে কোথায় গিয়ে দাড়াবে? উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নযাত্রা কি ডিপ্লোমাতে শেষ হয়ে যাবে? মেধাবীদের এই অগ্রযাত্রাকে শাণিত করতে সরকার কি কিছুই করতে পারে না? আর কতদিন বোধহীন হয়ে থাকবে আমাদের সরকার?

দীর্ঘ চারবছর ডিপ্লোমা কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবছর পলিটেকনিক থেকে হাজার হাজার ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বের হয়। তাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য রয়েছে সরকারী একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান ডুয়েট। প্রতিবছর এই ডুয়েটে কয়জনইবা চান্স পায়? আর এই ডুয়েটে একটি বিভাগের জন্য কয়টিইবা সিট বরাদ্দ আছে?

ডুয়েটের ভর্তি কার্যক্রম লক্ষ্য করলে দেখা যায় ৭টি বিভাগের জন্য সিট আছে মোট ৫৪০টি। তিনটি বিভাগের জন্য ১২০টি করে আসন ছাড়া অন্যান্য বিভাগের জন্য ৬০....... অল্পসংখ্যক আসন বরাদ্দ আছে। প্রতি বছর তারা সিজিপিরের ভিত্তিতে ৪-৫হাজারের মত ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী বাছাই করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। শুধুমাত্র তারাই উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। তাহলে প্রতিবছর পলিটেকনিক থেকে হাজার হাজার যে ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বের হচ্ছে তাদের অধিকাংশের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ কোথায় দেওয়া হচ্ছে? কেন এই দায়িত্বহীনতা? মেধাবীদের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নকে কেন মুকুলেই নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে? কে দিবে এসব প্রশ্নের জবাব?

ডুয়েটে মাত্র ৫৪০টি সিট বরাদ্দ আছে পুরো ৭টি বিভাগের জন্য। অথচ দেশে প্রতিবছর পলিটেকনিক থেকে তার চার-পাঁচগুণ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বের হয় শুধুমাত্র ১টি বিভাগ থেকে। এবার হিসাব করে দেখুন দেশে ৫০০ মত পলিটেকনিকের ৭-১০টি বিভাগ (বিভাগ হয়ত আরো বেশি হতে পারে) থেকে কতজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী বের হচ্ছে? তাহলে এই অধিক সংখ্যক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা উচ্চ শিক্ষা কোথায় করবে?

অনেকে বলতে পারেন ডিপ্লোমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশে অনেক বেসরকারী প্রতিষ্টান রয়েছে বাকীরা এখানে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করবে। আচ্ছা ডিপ্লোমা পড়ুয়া এমন কয়জনেরই পরিবারের সামর্থ আছে বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ছেলেকে বেসরকারীতে ভর্তি করাবে?

আবার অনেকে বলতে পারেন চাকরীক্ষেত্রে ডিপ্লোমাদের জন্য অনেক সুযোগ। উচ্চ শিক্ষার কি দরকার। বাকীরা ডিপ্লোমা শেষে কোনমত চাকরী বাকরি করে নিজের আত্মকর্মসংস্থানটি তৈরি করে নিবে। আচ্ছা তাই বলে কি আমাদের উচ্চশিক্ষার কোন অধিকার নেই?

"বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫তম ধারায় মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। (ক) এ বলা হয়েছে- অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে" এক্ষেত্রে শিক্ষাটা আমাদের মৌলিক অধিকার। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে কেন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? এ প্রশ্ন শুধু আমার নয়, এদেশের লক্ষ লক্ষ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের, যারা উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখে।

বলতে গেলে বর্তমানে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। যা কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।যেমন- শিক্ষক স্বল্পতা ও প্রশিক্ষণের অভাব, মানসম্পন্ন পাঠ্যপুস্তকের অভাব, ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য উপযুক্ত যন্ত্রপাতিও কাঁচামালের অভাব এবং শিল্পকারখানার বাস্তব প্রশিক্ষণ ফলপ্রসূ না হওয়া ইত্যাদি। যা মোটেও কাম্য নয়।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পেশাগত জ্ঞান ও কর্মদক্ষতার ওপর যেমন নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন, কাজের মান ও গতিশীলতা; তেমনই তাদের ক্রিয়াশীল ভূমিকা তরান্বিত করে দেশের আর্থ সামাজিক সমৃদ্ধি।

তাই, দেশের মধ্যম স্তরের প্রশিক্ষিত, দক্ষ জনশকজনশক্তির প্রসার ঘটাতে ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সারাদেশে বর্তমান পলিটেকনিক শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক মানোন্নয়ন জরুরি।কিন্তু আমাদের সরকার এবং কারিগরি শিক্ষাক্ষেত্রে বসে থাকা নীতিনির্ধারকদের সেই বিষয়ে কোন মাথাব্যথা নেই।

একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবশ্যয় কারিগরি শিক্ষাকে প্রমোট করতে হবে, সেখানে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবহেলা করাটা দেশের বিরুদ্ধে, কারিগরি শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল। যা স্বয়ং সরকারই করছে।

পরিশেষে একজন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী হিসবে বলতে চাই আমাদের দেশের এই অধিক সংখ্যক ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য দ্রুত ডুয়েটের মত আরো কয়েকটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টা করা হোক। যা বর্তমানে সময়ের দাবীও বটে।

সাইফুদ্দিন আযাদ

শিক্ষার্থী, চ.প.ই

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট: সাড়ে ৬ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রাবাস, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধূরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি  খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে করে চরম ভোগন্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে র্দীঘদিন ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে সংস্কার না হওয়ায় ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ছাত্রাবাস সংস্কার করে তা খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর দ্বন্দ্ব এখ...

ডিপ্লোমা কি অনার্স এর সমমান?

না ডিপ্লোমা অনার্সের সমমান নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার মান কোনটা কি দেখতে নিচের ছবিটা দেখুন

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কিভাবে শাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেতে চান ?

শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বেস্ট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর মধ্যে একটি । এখানকার কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) ফ্যাকাল্টি এবং ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) এর ফ্যাকাল্টি এর ডিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এর পরপরই । কেননা এই দুইটি ফ্যাকাল্টি বিশেষত CSE ফ্যাকাল্টি এর দায়িত্বে রয়েছেন আমাদের সকলের অতি পরিচিত মুখ আর আমাদের শ্রদ্ধাভাজন " ডঃ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার" । এই কথা শুনে ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট কিংবা ডুয়েটিয়ান রা যত চিল্লাচিল্লি করুক না কেন শেষ পর্যন্ত যখন জব মার্কেট কে এনালাইসিস করবে সকলে এবং সেই সাথে যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিবিদ দের পরামর্শ নিবেন তখনই বুঝতে পারবেন কথাটি কতটুকু সত্য । যাই হউক এবার আসি মুল বক্তব্য এ । একথা সত্য যে যে ডুয়েট এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া ব্যাতিরখে কেউ কখনও শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির আশা কোনভাবেই করতে পারে না ।